ঈদ উপলক্ষে ১০টি জনপ্রিয় ডেজার্ট রেসিপি সুস্বাদু উপভোগের জন্য
ঈদ মোবারক! খুশির ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর নানা পদের মুখরোচক খাবার। আর ঈদের খাবারের তালিকায় মিষ্টি বা ডেজার্টের যেন কোনও তুলনাই হয় না। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে পরিবারের সবার মন জয় করতে ঈদের ডেজার্টের ভূমিকা অপরিসীম। তাই, এবারের ঈদকে আরও মিষ্টিময় ও স্মরণীয় করে তুলতে আমরা নিয়ে এসেছি "ঈদ স্পেশাল ১০ টি ডেজার্ট রেসিপি"। এই পোস্টে আপনারা পাবেন ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক মিলিয়ে সেরা কিছু ডেজার্টের সহজ ও বিস্তারিত রেসিপি, যা আপনার ঈদের আয়োজনকে করবে পরিপূর্ণ। চলুন, দেরি না করে দেখে নিই সেই জিভে জল আনা রেসিপিগুলো!
মূল অংশ: ঈদ স্পেশাল সেরা ১০টি ডেজার্ট রেসিপি
এখানে প্রতিটি ডেজার্টের উপকরণ এবং প্রস্তুত প্রণালী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো, যাতে আপনি সহজেই ঘরে তৈরি করতে পারেন।
১. দুধ সেমাই (Dudh Shemai): ঈদের সকালের ঐতিহ্য
ঈদের সকালটা যেন দুধ সেমাই ছাড়া অপূর্ণই থেকে যায়। এই ক্লাসিক রেসিপিটি তৈরি করা যেমন সহজ, স্বাদেও তেমন অতুলনীয়।
উপকরণ তালিকা:
- দুধ: ১ লিটার
- লাচ্ছা বা লম্বা সেমাই: ১ কাপ (প্রায় ১০০-১৫০ গ্রাম)
- চিনি: স্বাদমতো (প্রায় ১/২ - ৩/৪ কাপ)
- এলাচ: ২-৩টি (থেঁতো করা)
- দারুচিনি: ১ টুকরা (ছোট)
- তেজপাতা: ১টি
- ঘি: ১ টেবিল চামচ
- কিশমিশ: ১ টেবিল চামচ
- পেস্তা ও কাজুবাদাম কুচি: ২ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)
প্রস্তুত প্রণালী:
- একটি পাত্রে দুধ নিয়ে এলাচ, দারুচিনি ও তেজপাতা দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। দুধ ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিন।
- অন্য একটি কড়াইতে ঘি গরম করে সেমাই হালকা সোনালী করে ভেজে নিন (যদি ভাজা সেমাই ব্যবহার না করেন)।
- দুধ কিছুটা ঘন হয়ে এলে ভাজা সেমাই ও চিনি যোগ করুন।
- অল্প আঁচে ৫-৭ মিনিট রান্না করুন, যতক্ষণ না সেমাই ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং দুধ মনমতো ঘন হয়। খেয়াল রাখুন, সেমাই যেন বেশি গলে না যায়।
- কিশমিশ মিশিয়ে নিন এবং নামিয়ে ফেলুন।
- উপরে বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে গরম বা ঠান্ডা পরিবেশন করুন আপনার মজাদার দুধ সেমাই।
টিপস: চিনি আপনার স্বাদ অনুযায়ী কম বা বেশি করতে পারেন। সেমাই যোগ করার পর বেশি নাড়াচাড়া না করাই ভালো, এতে সেমাই ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
২. লাচ্ছা সেমাই (Laccha Shemai): ঝটপট মিষ্টি আয়োজন
ঈদের ব্যস্ততার মাঝে খুব সহজে ও দ্রুত তৈরি করা যায় এই ঝরঝরে লাচ্ছা সেমাই। এটি শুকনো অথবা দুধ দিয়েও পরিবেশন করা যায়।
উপকরণ তালিকা:
- লাচ্ছা সেমাই: ২০০ গ্রামের ১ প্যাকেট
- ঘি: ২-৩ টেবিল চামচ
- চিনি: ১/২ কাপ (বা আপনার স্বাদ অনুযায়ী)
- নারকেল কোরা: ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, দিলে স্বাদ বাড়ে)
- এলাচ গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
- সাজানোর জন্য: বাদাম ও কিশমিশ পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালী:
- একটি কড়াইতে ঘি গরম করে নিন। লাচ্ছা সেমাই দিয়ে অল্প আঁচে ২-৩ মিনিট হালকা ভেজে নিন।
- এবার চিনি, নারকেল কোরা (যদি ব্যবহার করেন) এবং এলাচ গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- চিনি গলে সেমাইয়ের সাথে মিশে যাওয়া পর্যন্ত নাড়াচাড়া করতে থাকুন।
- সুন্দর করে বাদাম ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। গরম দুধ ও কনডেন্সড মিল্কের সাথেও এই সেমাই দারুণ লাগে।
টিপস: সেমাই ভাজার সময় আঁচ কম রাখুন, নাহলে পুড়ে যেতে পারে এবং স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
৩. শাহী টুকরা (Shahi Tukra): ঈদের রাজকীয় মিষ্টি
নামের মতোই স্বাদে ও পরিবেশনে রাজকীয় এই শাহী টুকরা ঈদের ডেজার্ট হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।
উপকরণ তালিকা:
- পাউরুটি: ৬-৮ স্লাইস (ধারগুলো কেটে ত্রিকোণ বা পছন্দমতো আকারে কাটা)
- ভাজার জন্য: পরিমাণমতো ঘি বা তেল
- মালাই/রাবড়ি তৈরির জন্য:
- দুধ: ১ লিটার (ফুল ক্রিম)
- চিনি: ১/২ কাপ (বা স্বাদ অনুযায়ী)
- এলাচ গুঁড়া: ১/৪ চা চামচ
- কনডেন্সড মিল্ক: ২-৩ টেবিল চামচ (ঐচ্ছিক, দিলে স্বাদ বাড়ে)
- জাফরান: সামান্য (অল্প দুধে ভিজিয়ে রাখা)
- সাজানোর জন্য: পেস্তা ও আমন্ড কুচি
প্রস্তুত প্রণালী:
- রাবড়ি তৈরি: একটি ভারী তলার পাত্রে দুধ নিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। ঘন ঘন নাড়তে থাকুন যাতে নিচে লেগে না যায়। দুধ ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে এলে চিনি, এলাচ গুঁড়া এবং কনডেন্সড মিল্ক (যদি দেন) যোগ করুন। আরও কিছুক্ষণ জ্বাল দিয়ে পছন্দমতো ঘন করে জাফরান মিশিয়ে নামিয়ে ঠান্ডা হতে দিন।
- পাউরুটির স্লাইসগুলো ডুবো তেলে বা ঘিয়ে সোনালী ও মুচমুচে করে ভেজে তুলুন। অতিরিক্ত তেল টিস্যু পেপারে চেপে ঝরিয়ে নিন।
- পরিবেশনের পাত্রে ভাজা পাউরুটির টুকরোগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে নিন।
- এর উপর তৈরি করে রাখা ঠান্ডা রাবড়ি বা মালাই সাবধানে ঢেলে দিন।
- উপরে পেস্তা ও আমন্ড কুচি ছিটিয়ে দিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন এই মজাদার শাহী টুকরা।
টিপস: পাউরুটি ভাজার সময় খেয়াল রাখবেন যেন পুড়ে না যায়, হালকা সোনালী রঙ হওয়াই যথেষ্ট।
৪. ফিরনি (Firni): সুগন্ধি ও ক্রিমি ডেজার্ট
চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি এই ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি তার ক্রিমি টেক্সচার ও সুগন্ধের জন্য সবার প্রিয়।
উপকরণ তালিকা:
- পোলাও চালের গুঁড়া বা বাসমতি চাল (আধ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিহি করে বেটে নেওয়া): ১/২ কাপ
- দুধ: ১ লিটার (ফুল ক্রিম)
- চিনি: ৩/৪ কাপ (বা স্বাদ অনুযায়ী)
- এলাচ: ২-৩টি (থেঁতো করা)
- কেওড়া জল: ১ চা চামচ (ঐচ্ছিক, সুন্দর গন্ধের জন্য)
- জাফরান: সামান্য (অল্প দুধে ভিজিয়ে রাখা)
- সাজানোর জন্য: পেস্তা ও কাঠবাদাম কুচি
প্রস্তুত প্রণালী:
- দুধের সাথে এলাচ দিয়ে একটি পাত্রে জ্বাল দিন।
- চালের গুঁড়া বা বাটা চাল অল্প ঠান্ডা দুধ বা পানি দিয়ে ভালোভাবে গুলে নিন যাতে কোনো দলা না থাকে।
- দুধ ফুটে উঠলে গোলানো চালের মিশ্রণটি আস্তে আস্তে ঢালুন এবং ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
- মাঝারি আঁচে রান্না করুন যতক্ষণ না চাল ভালোভাবে সেদ্ধ হয় এবং মিশ্রণটি ঘন হয়ে আসে (সাধারণত ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে)।
- চিনি যোগ করুন এবং আরও ৫ মিনিট রান্না করুন।
- ফিরনি ঘন হয়ে এলে জাফরান এবং কেওড়া জল (যদি দেন) মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
- ছোট মাটির পাত্রে বা বাটিতে ঢেলে উপরে বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
টিপস: চালের গুঁড়া যোগ করার পর থেকে অনবরত নাড়তে থাকা খুবই জরুরি, নাহলে নিচে লেগে যেতে পারে বা দলা পেকে যেতে পারে।
৫. জর্দা (Jorda): ঈদের রঙিন মিষ্টি পোলাও
রঙিন, সুগন্ধি এবং মিষ্টি স্বাদের এই জর্দা পোলাও ঈদের আয়োজনে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ করে।
উপকরণ তালিকা:
- বাসমতি বা কালিজিরা চাল: ১ কাপ
- চিনি: ১ থেকে ১.৫ কাপ (আপনার স্বাদ অনুযায়ী)
- ঘি: ১/২ কাপ
- এলাচ: ৪-৫টি
- দারুচিনি: ২ টুকরা (ছোট)
- লবঙ্গ: ৪-৫টি
- তেজপাতা: ২টি
- জর্দার রঙ বা হলুদ ফুড কালার: সামান্য
- মোরব্বা কুচি: ১/৪ কাপ
- কিশমিশ: ২ টেবিল চামচ
- বাদ কুচি (পেস্তা, কাজু, কাঠবাদাম): ১/৪ কাপ
- ছোট মিষ্টি/মাওয়া/ক্ষীর: সাজানোর জন্য (ঐচ্ছিক)
- গরম পানি: পরিমাণ মতো (ভাত রান্নার জন্য)
প্রস্তুত প্রণালী:
- চাল ভালো করে ধুয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- একটি পাত্রে পরিমাণমতো পানি, তেজপাতা ও জর্দার রঙ দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ভেজানো চাল দিয়ে ৮০% সেদ্ধ করে মাড় ঝরিয়ে ফেলুন।
- অন্য একটি ছড়ানো পাত্রে ঘি গরম করে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ দিন। সুন্দর গন্ধ বের হলে চিনি ও সামান্য পানি (প্রায় ১/৪ কাপ) দিয়ে সিরা তৈরি করুন।
- সিরা ফুটে উঠলে সেদ্ধ করে রাখা ভাত দিয়ে হালকা হাতে মিশিয়ে নিন।
- মোরব্বা, কিশমিশ এবং অর্ধেক বাদাম কুচি ছড়িয়ে দিয়ে পাত্রটি ঢেকে খুব অল্প আঁচে ১৫-২০ মিনিট দমে রাখুন।
- হয়ে গেলে নামিয়ে বাকি বাদাম কুচি ও ছোট মিষ্টি বা মাওয়া দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন সুস্বাদু জর্দা।
টিপস: ভাত যেন বেশি সেদ্ধ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, ঝরঝরে থাকাটা জরুরি।
৬. গোলাপ জামুন (Gulab Jamun): সবার প্রিয় মিষ্টি
দুধের গুঁড়া দিয়ে তৈরি নরম তুলতুলে এই মিষ্টিটি ছোট-বড় সবার কাছেই খুব জনপ্রিয়।
উপকরণ তালিকা:
- জামুনের জন্য:
- গুঁড়া দুধ: ১ কাপ
- ময়দা: ১/৪ কাপ
- সুজি: ১ টেবিল চামচ
- বেকিং পাউডার: ১/২ চা চামচ
- ঘি/তরল দুধ: ২ টেবিল চামচ (ডো তৈরির জন্য)
- তরল দুধ বা পানি: অল্প অল্প করে (প্রয়োজন অনুযায়ী)
- সিরার জন্য:
- চিনি: ২ কাপ
- পানি: ২ কাপ
- এলাচ: ২-৩টি
- কেওড়া জল বা গোলাপ জল: ১ চা চামচ
- তেল বা ঘি: ভাজার জন্য পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালী:
- সিরা তৈরি: একটি পাত্রে চিনি, পানি ও এলাচ দিয়ে জ্বাল দিন। সিরা ফুটে উঠলে ৫-৭ মিনিট মাঝারি আঁচে ফুটিয়ে একটু আঠালো ভাব এলে কেওড়া/গোলাপ জল দিয়ে নামিয়ে ফেলুন। সিরা বেশি ঘন করবেন না।
- জামুন তৈরি: একটি পাত্রে গুঁড়া দুধ, ময়দা, সুজি ও বেকিং পাউডার ভালো করে মিশিয়ে নিন। ঘি দিয়ে ময়ান দিন। এবার অল্প অল্প করে তরল দুধ বা পানি মিশিয়ে একটি নরম ও মসৃণ ডো তৈরি করুন। (খুব বেশি মাখবেন না, আলতো হাতে মেশান)।
- ডো থেকে ছোট ছোট মসৃণ বল তৈরি করুন, খেয়াল রাখবেন বলের গায়ে যেন কোনো ফাটল না থাকে।
- কড়াইতে তেল বা ঘি মাঝারি আঁচে গরম করুন (খুব বেশি গরম নয়)। জামুনের বলগুলো তেলে ছেড়ে দিন। অল্প আঁচে সময় নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সোনালী থেকে গাঢ় বাদামী রঙ না হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- ভাজা জামুনগুলো তেল থেকে তুলে সরাসরি গরম সিরায় ছেড়ে দিন। ২-৩ ঘণ্টা বা সম্ভব হলে সারারাত সিরায় ভিজিয়ে রাখুন।
- জামুনগুলো রসে টইটম্বুর হয়ে ফুলে উঠলে পরিবেশন করুন।
টিপস: জামুন ভাজার সময় আঁচ কম রাখা খুব জরুরি, নাহলে উপরটা দ্রুত পুড়ে যাবে কিন্তু ভেতরে কাঁচা থেকে যেতে পারে।
৭. রসমালাই (Rasmalai): দুধের সাগরে ভাসা মিষ্টি
দুধের তৈরি নরম ছানার ছোট ছোট মিষ্টি যখন সুগন্ধি দুধের রসে ভাসে, তখন তার স্বাদ হয় অসাধারণ।
উপকরণ তালিকা:
- ছানার জন্য:
- দুধ: ১ লিটার (ফুল ক্রিম)
- লেবুর রস বা ভিনেগার: ২-৩ টেবিল চামচ
- মালাই/রসের জন্য:
- দুধ: ১ লিটার (ফুল ক্রিম)
- চিনি: ১/২ - ৩/৪ কাপ (আপনার স্বাদ অনুযায়ী)
- এলাচ গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
- জাফরান: সামান্য (অল্প দুধে ভিজিয়ে রাখা)
- পেস্তা ও কাঠবাদাম কুচি: সাজানোর জন্য
- ছানার মিষ্টি সেদ্ধ করার জন্য (সিরা):
- চিনি: ১ কাপ
- পানি: ৪ কাপ
প্রস্তুত প্রণালী:
- ছানা তৈরি: ১ লিটার দুধ একটি পাত্রে নিয়ে জ্বাল দিন। দুধ ফুটে উঠলে চুলা বন্ধ করে অল্প অল্প করে লেবুর রস বা ভিনেগার দিন এবং নাড়তে থাকুন। দুধ ফেটে ছানা ও পানি আলাদা হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে ছেঁকে নিন। ছানার পোটলাটি ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন যাতে লেবুর টক ভাব চলে যায়। এরপর পোটলাটি চেপে অতিরিক্ত পানি বের করে ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখুন।
- পানি ঝরে গেলে ছানা একটি প্লেটে নিয়ে হাতের তালু দিয়ে ৭-৮ মিনিট ভালো করে মথে মসৃণ করে নিন। ছানা থেকে ছোট ছোট গোল বা চ্যাপ্টা আকারের মিষ্টি তৈরি করুন।
- মিষ্টি সেদ্ধ: একটি ছড়ানো পাত্রে ৪ কাপ পানি ও ১ কাপ চিনি দিয়ে সিরা তৈরি করুন। সিরা ফুটে উঠলে ছানার মিষ্টিগুলো সাবধানে ছেড়ে দিন। পাত্রটি ঢেকে দিয়ে মাঝারি আঁচে ১৫-২০ মিনিট সেদ্ধ করুন। মিষ্টিগুলো ফুলে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
- মালাই তৈরি: অন্য একটি পাত্রে ১ লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে लगभग অর্ধেক পরিমাণে নিয়ে আসুন। চিনি, এলাচ গুঁড়া ও দুধে ভেজানো জাফরান মিশিয়ে দিন।
- সেদ্ধ হওয়া মিষ্টিগুলো সিরা থেকে তুলে হালকা হাতে চেপে অতিরিক্ত রস ফেলে দিয়ে তৈরি করা ঘন দুধে (মালাই) ছেড়ে দিন। অল্প আঁচে আরও ৫-৭ মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে নিন।
- সম্পূর্ণ ঠান্ডা করে উপরে বাদাম কুচি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার রসমালাই।
টিপস: ছানা মথার সময় খেয়াল রাখবেন যেন খুব বেশি ড্রাই বা খুব বেশি নরম না হয়। মথা মসৃণ হলে মিষ্টি নরম হবে।
৮. গাজরের হালুয়া (Gajorer Halwa): পুষ্টিকর ও সুস্বাদু
শীতকালীন সবজি গাজর দিয়ে তৈরি এই হালুয়া তার রঙ, স্বাদ আর পুষ্টিগুণের জন্য সবার কাছেই প্রিয়। ঈদের ডেজার্ট হিসেবেও এটি দারুণ।
উপকরণ তালিকা:
- গাজর: ১ কেজি (ভালো করে ধুয়ে গ্রেট করা)
- দুধ: ১ লিটার (ফুল ক্রিম)
- চিনি: ১.৫ কাপ (বা আপনার স্বাদ অনুযায়ী)
- ঘি: ১/২ কাপ
- এলাচ গুঁড়া: ১ চা চামচ
- কনডেন্সড মিল্ক: ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, ব্যবহার করলে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিন)
- মাওয়া বা গুঁড়া দুধ: ১/২ কাপ (ঐচ্ছিক, দিলে স্বাদ ও ঘনত্ব বাড়ে)
- বাদাম ও কিশমিশ: সাজানোর জন্য পরিমাণ মতো
প্রস্তুত প্রণালী:
- একটি ভারী তলার কড়াইতে গ্রেট করা গাজর এবং দুধ দিয়ে মাঝারি আঁচে রান্না শুরু করুন। মাঝে মাঝে নেড়ে দিন যাতে নিচে লেগে না যায়।
- দুধ শুকিয়ে যখন গাজর ভালোভাবে সেদ্ধ হয়ে যাবে, তখন চিনি এবং ঘি দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন।
- কনডেন্সড মিল্ক (যদি ব্যবহার করেন) এবং এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে দিন।
- মিশ্রণটি কড়াইয়ের গা ছেড়ে না আসা পর্যন্ত এবং ঘি হালুয়ার উপর ভেসে না ওঠা পর্যন্ত ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
- মাওয়া বা গুঁড়া দুধ (যদি ব্যবহার করেন) মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ নেড়ে নামিয়ে ফেলুন।
- উপরে বাদ ও কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম অথবা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।
টিপস: নন-স্টিক প্যান ব্যবহার করলে হালুয়া লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং নাড়তে সুবিধা হয়।
৯. ফালুদা (Falooda): ঈদের সতেজ ডেজার্ট
ঈদের দুপুরে বা বিকেলে ঠান্ডা ঠান্ডা ফালুদা পরিবেশন করলে ক্লান্তি দূর হয়ে মন সতেজ হয়ে ওঠে।
উপকরণ তালিকা:
- ফালুদা নুডুলস/সেদ্ধ সেমাই: ১/২ কাপ
- দুধ: ২ কাপ (ঘন করে জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করা)
- চিনি: স্বাদ অনুযায়ী
- তোকমা দানা (Sabja seeds): ২ টেবিল চামচ (পানিতে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখা)
- রুহ আফজা বা রোজ সিরাপ: পরিমাণ মতো
- আইসক্রিম: ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি বা ম্যাংগো ফ্লেভার (পরিবেশনের জন্য)
- জেলো: বিভিন্ন রঙের (ছোট টুকরো করে কাটা, ঐচ্ছিক)
- বিভিন্ন ফল: আপেল, কলা, আঙুর, আনার (ছোট ছোট টুকরো করা, ঐচ্ছিক)
- বাদام কুচি: সাজানোর জন্য
প্রস্তুত প্রণালী:
- একটি লম্বা পরিবেশনের গ্লাসে প্রথমে নিচে কিছুটা রুহ আফজা বা রোজ সিরাপ দিন।
- এরপর পর্যায়ক্রমে সেদ্ধ ফালুদা নুডুলস, ভেজানো তোকমা দানা, আপনার পছন্দের ফলের টুকরো এবং জেলো (যদি দেন) স্তর করে সাজান।
- এবার চিনি মেশানো ঘন ঠান্ডা দুধ গ্লাসে ঢেলে দিন।
- সবার উপরে এক বা দুই স্কুপ আইসক্রিম দিন।
- সবশেষে উপরে আবারও সামান্য রুহ আফজা এবং বাদাম কুচি ছিটিয়ে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশন করুন ঠান্ডা ঠান্ডা মজাদার ফালুদা।
টিপস: দুধ আগে থেকে জ্বাল দিয়ে ঘন করে সম্পূর্ণ ঠান্ডা করে রাখলে ফালুদার স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়।
১০. ক্যারামেল পুডিং (Caramel Pudding): আধুনিক ও জনপ্রিয়
ডিম ও দুধের সমন্বয়ে তৈরি এই ক্যারামেল পুডিং ছোট থেকে বড় সবার কাছেই খুব প্রিয়। এটি তৈরি করাও বেশ সহজ।
উপকরণ তালিকা:
- ক্যারামেলের জন্য:
- চিনি: ১/২ কাপ
- পানি: ২ টেবিল চামচ
- পুডিংয়ের জন্য:
- ডিম: ৪টি
- দুধ: ২ কাপ (ফুল ক্রিম, হালকা গরম)
- চিনি: ১/২ কাপ (বা আপনার স্বাদ অনুযায়ী)
- ভ্যানিলা এসেন্স: ১ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালী:
- ক্যারামেল তৈরি: একটি ভারী তলার পাত্রে (যে পাত্রে পুডিং জমাবেন, সেটি ওভেনপ্রুফ বা স্টিমপ্রুফ হতে হবে) চিনি ও পানি দিয়ে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন। নাড়াচাড়া না করে পাত্রটি শুধু হাতল ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ক্যারামেল তৈরি করুন। যখন চিনির রঙ সোনালী-বাদামী হয়ে আসবে, তখন নামিয়ে পাত্রের সবদিকে ক্যারামেলটি ঘুরিয়ে ছড়িয়ে দিন এবং ঠান্ডা হতে দিন।
- পুডিং মিশ্রণ তৈরি: একটি বাটিতে ডিমগুলো ভালো করে ফেটিয়ে নিন। ডিম ফেটানো হলে চিনি দিয়ে আবার ফেটান যতক্ষণ না চিনি ভালোভাবে গলে যায়।
- এবার হালকা গরম দুধ অল্প অল্প করে ডিমের মিশ্রণে ঢালুন আর চামচ বা হুইস্ক দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। সবশেষে ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে নিন।
- ডিম ও দুধের মিশ্রণটি একটি মিহি ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে ক্যারামেল করে রাখা পাত্রে সাবধানে ঢেলে দিন।
- স্টিমিং বা বেকিং পদ্ধতি:
- স্টিমিং: একটি বড় হাঁড়িতে পানি দিয়ে তার উপর একটি স্ট্যান্ড বসান। পুডিংয়ের পাত্রটি স্ট্যান্ডের উপর বসিয়ে দিন। পাত্রের মুখ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল দিয়ে ভালো করে মুড়ে দিন যাতে ভেতরে পানি না ঢোকে। এবার হাঁড়ির ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে ৩০-৪০ মিনিট ভাপে রান্না করুন।
- বেকিং: ওভেন ১৮০° সেলসিয়াস (৩৫০° ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করুন। একটি বেকিং ট্রেতে পুডিংয়ের বাটিটি বসিয়ে ট্রেতে গরম পানি ঢালুন (পানি যেন পুডিং বাটির অর্ধেক পর্যন্ত থাকে)। ৪৫-৬০ মিনিট বেক করুন, অথবা যতক্ষণ না একটি কাঠি পুডিংয়ের মাঝে ঢোকালে সেটি পরিষ্কার বের হয়ে আসে।
- পুডিং হয়ে গেলে নামিয়ে সম্পূর্ণ ঠান্ডা করুন। এরপর ফ্রিজে ২-৩ ঘণ্টা রেখে দিন যাতে ভালোভাবে সেট হয়ে যায়।
- পরিবেশনের আগে একটি ছুরি দিয়ে পাত্রের চারপাশের ধারগুলো আলগা করে একটি পরিবেশনের প্লেটে সাবধানে উল্টে দিন।
টিপস: ডিমের মিশ্রণ খুব বেশি ফেটাবেন না, এতে পুডিংয়ের ভেতরে বেশি বুদবুদ তৈরি হতে পারে। দুধ যেন খুব গরম না থাকে, হালকা গরম দুধ ব্যবহার করুন।
ঈদের ডেজার্ট তৈরির কিছু অতিরিক্ত টিপস
- পরিকল্পনা: ঈদের অন্তত একদিন আগে ঠিক করে নিন কোন কোন ডেজার্ট তৈরি করবেন এবং সে অনুযায়ী উপকরণ গুছিয়ে রাখুন। কিছু ডেজার্ট, যেমন পুডিং বা ফিরনি, আগের দিন তৈরি করে রাখলে ঈদের দিন চাপ কমে।
- উপকরণ: চেষ্টা করুন তাজা ও ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করতে। এতে ডেজার্টের স্বাদ ও মান দুটোই ভালো হবে।
- পরিবেশন: ডেজার্ট সুন্দরভাবে পরিবেশন করলে তা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। সুন্দর বাটি, ফল, বাদাম বা চেরি দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
- স্বাস্থ্যসচেতনতা: যারা স্বাস্থ্য নিয়ে একটু বেশি সচেতন, তারা চিনি বা ঘিয়ের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে বা বিকল্প ব্যবহার করে ডেজার্ট তৈরি করতে পারেন।
উপসংহার:
আশা করি, উপরে দেওয়া "ঈদ স্পেশাল ১০ টি ডেজার্ট রেসিপি" আপনাদের সবার খুব ভালো লেগেছে এবং এবারের ঈদে আপনারা এই রেসিপিগুলো চেষ্টা করে দেখবেন। প্রতিটি রেসিপি এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে যে কেউ সহজেই ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন। এই মিষ্টি পদগুলো আপনার ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলুক, এই কামনাই করি। সবাইকে আবারও ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক!
কল টু অ্যাকশন:
- এই ১০টি রেসিপির মধ্যে আপনার সবচেয়ে পছন্দের ঈদের ডেজার্ট কোনটি? অথবা আপনি ঈদে কোন স্পেশাল ডেজার্ট তৈরি করেন? নিচে কমেন্ট করে আমাদের জানান!
- যদি এই ব্লগ পোস্টটি আপনার ভালো লেগে থাকে, তবে বন্ধুদের ও পরিবারের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন। সবাইকে ঈদের মিষ্টি আয়োজনে সাহায্য করুন!
আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url